লাল-নীল-সবুজ সূর্যের রহস্য উন্মোচন
আঠারো
শতকের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, এক অদ্ভুত সূর্য ছিল যা লাল, নীল এবং সবুজ রঙে দেখা
গিয়েছিল। বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা এই রহস্যের সঙ্গে যুক্ত করেছেন একটি আগ্নেয়গিরির
কথা। সেই সময় পৃথিবী একটি অজ্ঞাত কারণে শীতল হয়ে গিয়েছিল, এবং এখন এই রহস্যও প্রকাশ
পেয়েছে।
বিজ্ঞানীরা
এখন সেই আগ্নেয়গিরির সন্ধান পেয়েছেন, যা পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর জন্য দায়ী ছিল। ১৮৩১
সালের একটি শ্রেষ্ঠ আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণই ছিল এর কারণ। এই ঘটনার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা
প্রায় ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পায়, যা পরে বিশ্বব্যাপী ফসলের দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষের
সৃষ্টি করে।
এই আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফলে যে বিশাল পরিমাণ গ্যাস সৃষ্টি হয়েছিল, তা সূর্যের আলোকে অবরুদ্ধ করে। এই গ্যাসের কারণে সূর্যকে নীল রঙে দেখা যেত। অগ্ন্যুৎপাতে সৃষ্ট সালফারাস গ্যাস সূর্যালোক বিপরীত করে এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি কম হয়ে যায়। ঐ সময়ের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নথিতে অন্ধকারাচ্ছন্ন আবহাওয়ার উল্লেখ রয়েছে, এবং উত্তর গোলার্ধে নীল, বেগুনি ও সবুজ রঙের সূর্যের দেখা মেলে।
সেই আগ্নেয়গিরির সঠিক পরিচয় ও অবস্থান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রহস্য ছিল। সম্প্রতি PNAS বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় ওই আগ্নেয়গিরির পরিচয় উন্মোচন করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটি রাশিয়া ও জাপানের মধ্যবর্তী সিমুশি এলাকায় অবস্থিত।
জাভারিটস্কি নামের এই আগ্নেয়গিরিটি একটি প্রত্যন্ত ও জনবসতিহীন দ্বীপে অবস্থিত, যা পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসার পথে বাধা দেয়। বর্তমান সময়ে এটি রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে একটি বিতর্কিত অঞ্চল। রাশিয়া এই দ্বীপকে কৌশলগত সামরিক পূর্বঘাঁটি হিসেবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
যুক্তরাজ্যের
সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জাভারিটস্কি আগ্নেয়গিরির খোঁজ পেয়েছেন।
তাঁরা ১৮৩১ সালে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার তথ্য নানা বরফখণ্ড থেকে বিশ্লেষণ করেছেন। বিজ্ঞানী
উইল হাচিসন বলেন, “আমরা আগ্নেয়গিরি ও বরফখণ্ড থেকে সংগৃহীত ছাই বিশ্লেষণ করেছি। জাভারিটস্কি
আগ্নেয়গিরি থেকে নেওয়া নমুনার সঙ্গে বরফে জমা ছাইয়ের নমুনার মিল পাওয়া গেছে।” বিজ্ঞানীরা
বরফের রসায়ন বিশ্লেষণ করেছেন, যা ১৮৩১ সালের বসন্ত-গ্রীষ্মের অগ্ন্যুৎপাতের সুনির্দিষ্ট
সময় নির্দেশ করে। দেখা গেছে, সেই বিস্ফোরণ ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং এর ছাই বিভিন্ন
এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল। যদিও দ্বীপটির অবস্থান খুব দূরে, সেখানে এখনও সক্রিয় আগ্নেয়গিরির
অঞ্চল রয়েছে।
সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট