পিথাগোরাস: গণিত শাস্ত্রের আদি পুরুষ
পিথাগোরাস, যিনি গণিত শাস্ত্রের আদি পুরুষ হিসেবে পরিচিত, ছিলেন একাধারে গণিতজ্ঞ, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক। ৫৭০ খ্রিস্টপূর্বে এজিয়ান সাগরের পূর্ব উপকূল অর্থাৎ বর্তমান তুরস্কের কাছাকাছি সামোস দ্বীপে তাঁর জন্ম। ছোটবেলা থেকেই তাঁর জানার প্রতি প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে কোনো একজন গুরুর কাছে জ্ঞান সম্পূর্ণ হয় না। জ্ঞানের ভাণ্ডার ছড়িয়ে আছে পৃথিবীব্যাপী। তাই জ্ঞান অন্বেষণের তাগিদে তিনি মিসরসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন। মিসরে তিনি গণিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞানে শিক্ষা লাভ করেন। সেখানকার পিরামিড দেখে তিনি অভিভূত হয়ে যান। বিশাল পিরামিড নির্মাণের সময় যে গাণিতিক নিয়ম অনুসারে পাথরগুলোকে সাজানো হয়েছিল তা থেকেই তাঁর মনে প্রথম জ্যামিতি সম্পর্কে ধারণা আসে।
প্রাচীন গ্রিসের গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল
পিথাগোরাসের সময়কাল ছিল প্রাচীন গ্রিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়কালে গ্রিসে বিজ্ঞান, দর্শন এবং গণিতের বিকাশ ঘটছিল। পিথাগোরাসের শিক্ষার প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে তাঁর শিষ্যরা তাঁর শিক্ষাকে অনুসরণ করে একটি সম্প্রদায় গঠন করেন, যা পিথাগোরিয়ান সম্প্রদায় নামে পরিচিত। এই সম্প্রদায়টি গণিত, দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতার মিশ্রণে একটি বিশেষ ধারা তৈরি করে।
জ্ঞান অন্বেষণের তাগিদ
বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে তিনি আবার ফিরে আসেন তাঁর জন্মভূমি সামোসে। এরই মধ্যে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তাঁর কাছে শিক্ষা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছাত্ররা আসতে থাকে। তিনি ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। তাঁর শিষ্যদের বলা হতো পিথাগোরিয়ান। পিথাগোরাসের শিষ্যরা তাঁর শিক্ষাকে অনুসরণ করে একটি সম্প্রদায় গঠন করেন, যা পিথাগোরিয়ান সম্প্রদায় নামে পরিচিত।
পিথাগোরাসের উপপাদ্য
গণিতবিদ্যায় তাঁর বিখ্যাত আবিষ্কার পিথাগোরাসের উপপাদ্য। এই উপপাদ্যটি হলো ইউক্লিডীয় জ্যামিতির অন্তর্ভুক্ত সমকোণী ত্রিভুজের তিনটি বাহু সম্পর্কিত একটি সম্পর্ক। পিথাগোরাসের নামানুসারে এ উপপাদ্যটির নাম করা হয়েছে। বর্তমানে পিথাগোরাস প্রধানত গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর সময় বা তাঁর মৃত্যুর ১৫০ বছর পর প্লেটো ও অ্যারিস্টটলের সময়ও তিনি গণিত বা বিজ্ঞানের জন্য বিখ্যাত ছিলেন না। তিনি তখন দার্শনিক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ৪৯৫ খ্রিস্টপূর্বে ৭৫ বছর বয়সে তিনি দক্ষিণ ইতালির মেতাপোন্তুমে মারা যান।
বহুমুখী প্রতিভা
পিথাগোরাসের জীবন ও কর্ম থেকে বোঝা যায় যে তিনি ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভা, যিনি গণিত, দর্শন এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখেছেন। তাঁর শিক্ষার প্রভাব আজও গণিত ও বিজ্ঞানের জগতে বিদ্যমান। তাঁর সময়কালে এবং পরবর্তী যুগে তাঁর শিক্ষার প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে তা আজও প্রাসঙ্গিক। পিথাগোরাসের উপপাদ্যটি আজও গণিতের একটি মৌলিক সূত্র হিসেবে বিবেচিত হয় এবং শিক্ষার্থীরা এটি শিখে থাকে।