MrJazsohanisharma

বিশ্ব প্রযুক্তি বাজারের নতুন চিত্র: একটি বিশ্লেষণ

বিশ্ব প্রযুক্তি বাজার ওলটপালট

 বিশ্ব প্রযুক্তি বাজারে এই বছর ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন, বিশেষ করে আইফোন, ক্রেতাদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বাজেট পিসি স্মার্টফোন বাজারে স্পষ্টভাবে লক্ষ করা গেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বাড়লেও ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, বড় স্টুডিও নয়, বরং ক্ষুদ্র নির্মাতারাই বছর গেমারদের মন জয় করেছে।

বিস্তারিত আলোচনা:

কম্পিউটার

এএমডি অ্যাপলের জয়যাত্রা: ইন্টেলের দুর্দিন

প্রযুক্তি জগতে প্রতিযোগিতা সবসময়ই তীব্র থাকে। এক সময় ইন্টেলের একচ্ছত্র রাজত্ব থাকলেও, বর্তমানে এএমডি এবং অ্যাপলের উত্থানের ফলে বাজারের চিত্র বদলে গেছে।

ইন্টেলের দুর্দিন: প্রসেসরের ব্যর্থতা গ্রাফিক্স কার্ডের উত্থান

এই বছর ইন্টেলের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি বছর হয়েছে। যদিও তারা নতুন কোর আল্ট্রা সিরিজের প্রসেসর বাজারে এনেছে, কিন্তু এই প্রসেসরগুলি ব্যবহারকারীদের আশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে ব্যর্থ হয়েছে। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ এবং তাপ উৎপাদনের পাশাপাশি, অন্যান্য প্রতিযোগীদের তুলনায় এই প্রসেসরগুলোর পারফরম্যান্সও তুলনামূলকভাবে কম বলে মনে করা হয়েছে। ফলে, ইন্টেলকে প্রায় ২০ হাজার কর্মচারী ছাঁটাই করতে হয়েছে।

অন্যদিকে, ইন্টেলের গ্রাফিক্স কার্ড বিভাগ বছরের শেষে আর্ক 'ব্যাটলমেজ' সিরিজের জিপিইউ লঞ্চ করে গেমার সমালোচকদের মন জয় করেছে। এই জিপিইউগুলির পারফরম্যান্স এবং দামের অনুপাত অনেককেই আকৃষ্ট করেছে।

এই পরিস্থিতির কারণ:

  • প্রতিযোগিতা: এএমডি এবং এনভিডিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীরা অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তি এবং নতুন নতুন ফিচারসহ প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ড বাজারে আনছে।
  • উৎপাদন সমস্যা: ইন্টেলের উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে, যার ফলে তারা বাজারের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে।
  • বাজারের পরিবর্তন: কম্পিউটার চিপ বাজার দ্রুত পরিবর্তনশীল হয়ে উঠেছে এবং ইন্টেল এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

এএমডি: একদিকে সাফল্য, অন্যদিকে হতাশা

এমডি বর্তমানে প্রযুক্তি জগতে একদিকে সাফল্যের শিখরে আর অন্যদিকে হতাশার গভীরে। রাইজেন প্রসেসরের সাফল্যের বিপরীতে, গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষেত্রে তাদের লড়াই অব্যাহত রয়েছে।

রাইজেনের জয়যাত্রা:

  • নতুন রাইজেন 9000 সিরিজ: এই সিরিজের প্রসেসরগুলি বিভিন্ন বেঞ্চমার্ক টেস্টে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে এবং গেমিং, কন্টেন্ট ক্রিয়েশন এবং অন্যান্য কাজের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
  • দামের তুলনায় পারফরম্যান্স: ইন্টেলের তুলনায় এএমডির প্রসেসরগুলি সাধারণত বেশি সাশ্রয়ী মূল্যের হয়ে থাকে এবং একই সাথে ভালো পারফরম্যান্স দেয়।

গ্রাফিক্স কার্ডের ব্যর্থতা:

  • রেডিওন 7000 সিরিজ: এই সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ডগুলি বাজারে প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি। অনেক ব্যবহারকারী পারফরম্যান্স, ড্রাইভার ইস্যু এবং উত্তাপের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
  • এনভিডিয়ার সাথে প্রতিযোগিতা: এনভিডিয়া বর্তমানে গ্রাফিক্স কার্ড বাজারে শীর্ষস্থান দখল করে আছে এবং তাদের প্রোডাক্টগুলি এএমডির তুলনায় অনেক বেশি জনপ্রিয়।

বাজারে এএমডির অবস্থান:

যদিও গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষেত্রে এএমডি কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও, রাইজেন প্রসেসরের সাফল্যের কারণে পিসি বাজারে তাদের অবস্থান এখনও শক্তিশালী।

 এনভিডিয়ার স্বর্ণযুগ: গেমিং এআইয়ের রাজা

এনভিডিয়া বর্তমানে প্রযুক্তি জগতে এক অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিশেষ করে গেমিং এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষেত্রে তাদের আধিপত্য অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

এনভিডিয়ার স্বর্ণযুগ চলছেই:

  • আরটিএক্স 4000 সিরিজের সাফল্য: এনভিডিয়ার আরটিএক্স 4000 সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ডগুলি গেমিং উৎসাহীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। এই কার্ডগুলি উচ্চ রেজোলিউশনে স্মুথ গেমপ্লে এবং রিয়ালিস্টিক গ্রাফিক্স প্রদান করে।

·         এনভিডিয়া RTX 4060 এবং 4050 সিরিজ: এনভিডিয়ার RTX 4060 এবং 4050 সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ডগুলি যদিও বাজারে বেশ সাফল্য পেয়েছে, তবে কিছু সমালোচনার মুখোমুখিও হয়েছে।

  • রে ট্রেসিং প্রযুক্তি: এনভিডিয়া রে ট্রেসিং প্রযুক্তির পথিকৃত। এই প্রযুক্তির সাহায্যে গেমগুলি আরও বাস্তবসম্মত এবং সুন্দর দেখায়।

এআই ক্ষেত্রে এনভিডিয়ার আধিপত্য:

  • ব্ল্যাকওয়েল এআই অ্যাক্সালারেটর: এনভিডিয়ার ব্ল্যাকওয়েল এআই অ্যাক্সালারেটরগুলি বর্তমানে এআই গবেষণা এবং উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী টুল।
  • ডেটা সেন্টার: বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের ডেটা সেন্টারে এনভিডিয়ার এআই চিপ ব্যবহার করছে।

কোপাইলট প্লাস ল্যাপটপ: আশা আর হতাশার সংমিশ্রণ

মাইক্রোসফট এবং কোয়ালকমের যৌথ উদ্যোগে তৈরি 'কোপাইলট প্লাস' ল্যাপটপের বাজারে আগমন ঘিরে প্রচুর আশাবাদ ছিল। স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরের শক্তি এবং উইন্ডোজ ১১ এর দক্ষতার সমন্বয়ে এই ল্যাপটপগুলো ব্যবহারকারীদের কাছে একটি নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা প্রদান করবে বলে আশা করা হয়েছিল। মাইক্রোসফটের দাবি ছিল, এই ল্যাপটপগুলো ম্যাকবুককেও টেক্কা দেবে।

কিন্তু বাস্তবতা অন্য ছবি তুলে ধরেছে। বেশিরভাগ ব্যবহারকারী এই ল্যাপটপগুলো থেকে আশা করা ফলাফল পাননি। অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন, অপ্রতুল ব্যাটারি লাইফ এবং কিছু সফটওয়্যার সমস্যার কারণে অনেকেই এই ল্যাপটপগুলো ফিরিয়ে দিয়েছেন। ফলে, কোপাইলট প্লাস পিসি বছরের অন্যতম বড় প্রযুক্তি ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

কোপাইলট প্লাস ল্যাপটপ ব্যর্থতার পেছনে কারণ:

  • অতিরিক্ত তাপ: স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরগুলি উচ্চ পারফরম্যান্সের জন্য বেশি শক্তি খরচ করে, যার ফলে ল্যাপটপটি অনেক গরম হয়ে যায়।
  • অপ্রতুল ব্যাটারি লাইফ: ব্যাটারি লাইফও ব্যবহারকারীদের আশা অনুযায়ী ছিল না।
  • সফটওয়্যার সমস্যা: স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর এবং উইন্ডোজ ১১ এর সমন্বয় সবসময় সুচারুভাবে কাজ করত না।
  • ম্যাকবুকের সাথে তুলনা: ম্যাকবুকের সাথে তুলনা করা হলে এই ল্যাপটপগুলো অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েছে।

অ্যাপলের আধিপত্য অব্যাহত: সফলতা ব্যর্থতার মিশ্রণ

অ্যাপল আবারও প্রমাণ করেছে যে তারা প্রযুক্তি জগতের অন্যতম শক্তিশালী খেলোয়াড়। নতুন এম৪ চিপসেট যুক্ত ল্যাপটপ, ডেস্কটপ এবং ট্যাবলেটগুলি বাজারে ধূমকেতেছে। এই ডিভাইসগুলির অসাধারণ পারফরম্যান্সের ফলে অ্যাপলের বিক্রি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আইফোন ১৬ সিরিজের জনপ্রিয়তাও অব্যাহত রয়েছে এবং এর বিক্রি % বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে, সব কিছুই সুন্দর নয়। অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স, তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিষেবা, বাজারে আশা করা সাফল্য পায়নি। অনেক ব্যবহারকারী এই পরিষেবার অপরিপক্বতা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনা করেছেন।

বিশ্লেষণ:

  • এম৪ চিপসেটের সাফল্য: নতুন এম৪ চিপসেটের অসাধারণ পারফরম্যান্স অ্যাপলকে বাজারে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে। এই চিপসেটগুলি ল্যাপটপ, ডেস্কটপ এবং ট্যাবলেটের কার্যক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।
  • আইফোন ১৬ সিরিজের জনপ্রিয়তা: আইফোন ১৬ সিরিজের নতুন ফিচার এবং উন্নত ক্যামেরা ব্যবস্থা ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করেছে।
  • অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সের ব্যর্থতা: অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সের অপরিপক্বতা এই সত্যটি প্রমাণ করে যে অ্যাপলও সব সময় সফল হয় না। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি দ্রুত বিকাশমান ক্ষেত্র এবং এই ক্ষেত্রে অ্যাপলকে আরও কাজ করতে হবে।

ওলেড মনিটর: দাম কমেছে, জনপ্রিয়তা বাড়ছে!

আপনি একেবারে ঠিক বলেছেন! পিসি বাজারে ওলেড মনিটরের দাম কমে যাওয়ায় এখন সাধারণ ব্যবহারকারীরাও এগুলো কিনতে পারছেন। এর ফলে ওলেড মনিটরের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।

কেন ওলেড মনিটরের দাম কমছে?

  • উৎপাদন খরচ কমছে: ওলেড প্যানেল তৈরির প্রযুক্তি উন্নতির ফলে উৎপাদন খরচ কমেছে।
  • প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি: বিভিন্ন কোম্পানি ওলেড মনিটর বাজারে আনছে, যার ফলে প্রতিযোগিতা বেড়েছে এবং দাম কমেছে।
  • চাহিদা বৃদ্ধি: গেমার, ভিডিও এডিটর এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের মধ্যে ওলেড মনিটরের চাহিদা বাড়ার ফলে উৎপাদন বেড়েছে এবং দাম কমেছে।

*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

POST ADS-1

POST ADS--2