তালগাছ

তাল (Asian Palmyra Palm): একটি বিস্ময়কর গ্রীষ্মকালীন ফল



তাল (বৈজ্ঞানিক নাম Borassus flabellifer) একটি ভারতীয় উপমহাদেশীয় গ্রীষ্মকালীন ফল। অনেক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী মনে করেন সব তালগাছই আসলে গাছ নয়। তালগাছ পাম গোত্রের অন্যতম দীর্ঘ গাছ, যা প্রায় ১০০ বছর বাঁচে এবং এই দীর্ঘজীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই ফল দেয়। তাল গাছ উচ্চতায় গড়ে ৩০ ফুট পর্যন্ত পৌঁছতে পারে এবং পৃথিবীর বহু দেশে প্রায় আড়াই হাজার প্রজাতির তালগাছের দেখা মেলে

তাল গাছের বৈশিষ্ট্য

তাল গাছ সম্পর্কে একটি মজার তথ্য হলো, এটি সাইকাস জাতীয় উদ্ভিদ। অর্থাৎ, তাল গাছ দুটি প্রজাতির হয়: পুরুষ এবং স্ত্রী। শুধুমাত্র স্ত্রী তাল গাছে ফল হয়, পুরুষ তাল গাছে ফল হয় না। তালের পাতা পাখার মত ছড়ানো, তাই বোরাসাস গণের পাম গোত্রের গাছগুলোকে একত্রে ফ্যান-পাম বলা হয়

বিজ্ঞানীরা বলছেন তাল গাছের পাতা দুই ধরণের। একটি প্রচলিত তাল পাতার মত, অন্যটি সুপারি পাতার মত দেখতে। অনেক উদ্ভিদ বিজ্ঞানী দাবি করছেন নারকেল কিংবা সুপারিগাছ তালগাছ গোত্রের। জেরোসিরি কিংবা মরুজ ক্রমাগমনের এক পর্যায়ে তাল কিংবা সুপারির উদ্ভব হয়েছে.

তাল গাছের ব্যবহার

বিশ্বের প্রথম দিকে গড়ে ওঠা মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় তালগাছের বহুল ব্যবহার সম্পর্কে জানা গেছে। বিশেষ করে তারা ফলকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। তালগাছের আঁশ নানা কাজে ব্যবহার করেছে। তালের কাণ্ডকে তারা গৃহস্থালীর নানা কাজে, গৃহনির্মাণ এমনকি ক্যানোজাতীয় নৌকা তৈরিতেও ব্যবহার করেছে

তাল গাছের পাতা  তালের বহুবিধ ব্যবহার

তাল গাছের প্রায় সব অঙ্গ থেকেই কিছু না কিছু কাজের জিনিস তৈরি হয়। তাল পাতার ব্যবহার: ঘর ছাওয়া, হাতপাখা, চাটাই, মাদুর, আঁকবার পট, লেখবার পুঁথি, কুণ্ডলী, পুতুল ইত্যাদি। কাণ্ডের ব্যবহার: বাড়ি, নৌকা, হাউস বোট ইত্যাদি। তাল রস ও ফলের ব্যবহার: পানীয় হিসেবে ও রস দিয়ে তাল গুড় তৈরি করা হয়। ফল কাঁচা ও পাকা দুভাবেই খাওয়া যায়.

পুষ্টি উপাদান ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

গ্রীষ্মের দিনে এশিয়ার দেশগুলোতে কাঁচা তালের শাঁস খুবই প্রিয় একটি খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম তালের শাঁসে রয়েছে ৮৭ কিলোক্যালরি, ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, জলীয় অংশ ৮৭.৬ গ্রাম, আমিষ ০.৮ গ্রাম, ফ্যাট ০.১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১০.৯ গ্রাম, খাদ্যআঁশ ১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.০৪ গ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.০২ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম.


তালের শাঁসের স্বাস্থ্য উপকারিতা

১. পানিশূন্যতা দূর করে: গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ দেহকে হাইড্রেটেড রাখে এবং ক্লান্তিহীন রাখে। 

২. ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স: তালে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স পানিপানের তৃপ্তি বাড়ায় এবং খাবারে রুচি আনতে সহায়তা করে। 

৩. ভিটামিন এ: তালে থাকা ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে। ৪. এন্টি অক্সিডেন্ট: তালের এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। 

৫. বমিভাব ও বিস্বাদ দূর করে: তাল বমিভাব ও বিস্বাদ দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

৬. ত্বকের যত্ন: তালে থাকা উপকারী উপাদান ত্বকের যত্ন নিতে সক্ষম। 

৭. লিভারের সমস্যা দূর করে: কচি তালের শাঁস লিভারের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। 

৮. রক্তশূন্যতা দূর করে: কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূরীকরণে দারুণ ভূমিকা রাখে। ৯. হাঁড় গঠনে সহায়তা করে: তালের শাঁসে থাকা ক্যালসিয়াম হাঁড় গঠনে সহায়তা করে।


তালের রসের স্বাস্থ্য উপকারিতা

১. অনিদ্রা দূর করে: অনিদ্রার সমস্যা থাকলে কচি তালের রস পান করুন। এটি রাতে পরিপূর্ণ ঘুম আনতে সহায়তা করে। 

২. ক্লান্তি দূর করে: তালের রস দ্রুত কার্যকরী টনিক হিসেবে কাজ করে এবং ক্লান্তি দূর করে। 

৩. পেটের সমস্যা দূর করে: পেটের জ্বালাপোড়া ও এসিডিটির সমস্যা দূর করতে তালের রস অত্যন্ত কার্যকরী। 

৪. মূত্রজনিত সমস্যায় কার্যকরী: গরমের সময় মূত্রত্যাগজনিত সমস্যায় তালের রস পান করুন। এটি দ্রুত কার্যকরী সমাধান দেয়। 

৫. অধিক কথা বলা রোগে: যারা বেশি কথা বলেন, তারা টাটকা তালের রস দুবেলা এক গ্লাস করে খেলে এই সমস্যা কমে যাবে।

তবে, তালের রস একটু ঘোলা বা বাসি হলে তা তাড়ি হয়ে যেতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন এবং তাজা রস পান করুন।

তাল গাছের এই বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা গ্রীষ্মকালে এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আপনি কি কখনো তাল খেয়েছেন? আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?


*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post