পৃথিবীর সৃষ্টির ইতিহাস

পৃথিবীর সৃষ্টি: এক বিস্ময়কর যাত্রা



আজ আমরা যে পৃথিবীতে বসবাস করি, তা কিন্তু সূচনা লগ্নে বসবাসের উপযোগী ছিল না। সূচনা লগ্নে আমাদের অতিপ্রিয় এই পৃথিবী ছিল এক বিশাল গ্যাসের পিণ্ড। ক্রমান্বয়ে শীতল হয়ে গ্যাসীয় পৃথিবী তরল রূপ ধারণ করে। তরলের যে অংশটুকু ঘন এবং ওজনে ভারী, সেটুকু চলে গেল কেন্দ্রের দিকে। তার উপরে রইল হালকা স্তর। সবচেয়ে উপরের স্তর জমে সরের মতো ঢেকে ফেলল গোটা পৃথিবীকে। এভাবেই সৃষ্টি হল পৃথিবীর ভূত্বক।
শিশু পৃথিবী আরও ঠাণ্ডা হয়ে ভূত্বক কুঁচকে গিয়ে সৃষ্টি হল বিভিন্ন প্লেটের। এ প্লেটগুলো একে অন্যের সাথে ধাক্কা খেয়ে সৃষ্টি করল বিভিন্ন পাহাড়-পর্বত। পৃথিবীর উপরি ভাগ শীতল হলেও অভ্যন্তরীণ ভাগ তখনও প্রচণ্ড গরম ছিল, যা কিনা টগবগ করে ফুটছিল। তাপ ছেড়ে দেওয়ার সময় পাহাড়ের মুখ দিয়ে জ্বলন্ত আগুনের শিখা ও বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ বেরিয়ে আসতে লাগল। আর এই গ্যাসীয় পদার্থ তৈরি করল বায়ুমণ্ডল।



উক্ত বায়ুমণ্ডলের বাতাসে তখন ছিল হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, মিথেন, অ্যামোনিয়া ছাড়া আরও প্রচুর জলীয় বাষ্প। পৃথিবী তাপ হারিয়ে শীতল হওয়ার সময় এই জলীয় বাষ্প জমে পুরু মেঘের আস্তরণের সৃষ্টি করে। এই মেঘ এত পুরু ছিল যে সূর্যের আলো মেঘ ভেদ করে পৃথিবীতে আসতে পারত না। এর ফলে গোটা পৃথিবী ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন।
শুরুর দিকে পৃথিবীর মাটি ছিল খটখটে শুকনো, এক ফোঁটাও পানি ছিল না। প্রথম প্রথম অবশ্য জলীয় বাষ্প জলকণা রূপে পৃথিবীতে ফিরে আসলেও তা আবার প্রচণ্ড গরমে বাষ্প হয়ে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যেত। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই ঘটনা ঘটেছে। পৃথিবী আরও তাপ হারালো এবং আরও শীতল হতে লাগল। তারপর পৃথিবী আরও শীতল হয়ে এমন রূপ নিল যে জলকণা আর বাষ্প হয়ে উড়ে গেল না। পুরু মেঘের আস্তরণ ভেদ করে শুরু হল বৃষ্টি, অবিরাম চলতে লাগল সেই মহা বৃষ্টি। অবিশ্রান্ত ধারায় মুষলধারে বৃষ্টি পড়ল বছরের পর বছর। টলটলে পানিতে ভিজে গেল পৃথিবীর মাটি। জন্ম নিল হ্রদ, সাগর, মহাসাগর।


এভাবে কেটে গেল লক্ষ লক্ষ বছর। একদিন থামল সেই বৃষ্টিধারা। পাতলা হয়ে এল পৃথিবীর আকাশ, সূর্যের আলো এসে পড়ল পৃথিবীর বুকে। পৃথিবীর চেহারা তখনও ভয়ঙ্কর, চারিদিকে প্রচণ্ড ঝড় বইছে। আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে জ্বলন্ত আগুনের শিখা, সমুদ্র ফুটছে টগবগ করে।

এভাবেই ধীরে ধীরে পৃথিবী হয়ে উঠল আমাদের বসবাসের উপযোগী। আজকের পৃথিবী তার সেই প্রাচীন রূপ থেকে অনেকটাই বদলে গেছে, কিন্তু তার সৃষ্টি ও বিবর্তনের এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রকৃতির অসীম শক্তি ও সৌন্দর্যের কথা।


*

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post